রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

কান্না লুকিয়ে ওরা আনন্দ দেয়

dig

মোঃ বিপ্লব, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কঠিন সব শারীরিক কসরত দেখিয়ে তারা দর্শককে আনন্দ দেন। কিন্তু আনন্দময় জীবনের সন্ধান নিজেরা পান না। কখনো কখনো দূর্ঘটনার সম্মুখীনও হন অনেকে। তারপরও জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে, কিছুটা পেশার প্রতি ভালোবাসার কারণে সার্কাসে খেলা দেখিয়েই জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দেন তারা। কেউ সাইকেল নিয়ে, কেউ ঝুলন্ত দড়ির ওপর শরীর নিয়ন্ত্রণ করে হেঁটে নানা খেলা দেখান। শুধু তাই নয়, আরো বিভিন্ন ধরনের খেলা তাদের দেখাতে হয়। নইলে যে দর্শকের হাততালি জোটে না, তারা বিনোদিত হন না পুরোপুরি। তখন সার্কাসও জমে না। খেলায় যত টানটান উত্তেজনা থাকবে, দর্শক ততো আনন্দিত হবেন। জমে উঠবে সার্কাস। যে কারণে জীবনের পরোয়া না করে দক্ষ বাজিকরের মতো একজন চোখ বেঁধে ছুড়ে মারেন চাকু। সেই চাকুর সামনে অন্যজনকে দাঁড়াতে হয় হাসি মুখে। একজন আরেকজনের ওপর ভর দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের মানবদৃশ্য। হাত দিয়ে না ধরে একটি বাঁশ কপালের ওপর রেখে নিয়ন্ত্রণ করেন একজন, সেই বাঁশের ওপর দাঁড়িয়ে খেলা দেখায় শিশু। এমন অনেক খেলা তারা জানে।

বলছিলাম সার্কাসের শিল্পীদের কথা। যদিও সমাজ তাদের ‘শিল্পী’ হিসেবে মূল্যায়ন করে না। নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এমনকি স্থানীয় জটিল রাজনীতিও তাদের চলার পথে মস্ত বাধা। ডিসেম্বর পরীক্ষার মাস। সূতরাং এ সময় তারা খেলা দেখানোর অনুমতি পান না। অথচ ঘরে ঘরে ডিশ তো চলেই। সেগুলো বন্ধ হয় না। কিন্তু তাদের অনুমতি মেলে না। ফলে নিদারুণ অর্থকষ্টে দিনযাপন করতে হয় তাদের। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ওরস মেলায় দ্য গ্রেট রওশন সার্কাস ও বুলবুল সার্কাসের শিল্পীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

 

রওশন সার্কাসের ম্যানেজার ফয়জুল আহমেদ। বুলবুল সার্কাসের মোজাফর ও জসিম বলেন, করোনার কারনে আমাদের দুই বছর ধরে বসেই দিন কাটাতে হয়। আগের মতো এখন সার্কাস প্রদর্শনের অনুমতি পাওয়া যায় না। বছরে ২-৩ মাস মাত্র সার্কাস প্রদর্শন করতে পারি। পরীক্ষা, স্থানীয় রাজনীতির বিভিন্ন ঝামেলায় সার্কাস চালানোর অনুমতি মেলে না। তখন আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। বাধ্য হয়ে তখন কেউ ভ্যান চালায়, কেউ অন্যের বাড়িতে কাজ করে। অনেকে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালায়। সরকার একবারও আমাদের কথা ভাবে না। সার্কাস না চললে যে এই শিল্পীদের পেটে খাবার জোটে না একথা ভাবার লোক দেশে নেই। আমাদের দাবি, বছরে ৭-৮ মাস যেন আমরা কোনো ঝামেলা ছাড়াই সার্কাস চালানোর অনুমতি পাই। তবেই সার্কাস শিল্পীরা ভালো থাকবে।’

সার্কাসে খেলা দেখান ডোমার উপজেলার শিউলি আকতার (৪০)। তিনি জানান, ৭ বছর বয়সে সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন দারিদ্র্যের কারণে। এরপর দলের একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই মেয়ে সন্তান এক ছেলে আছে বয়স ৭ বছর সেও এখানে কাজ করে আসছে। তার দুই মেয়ে এখন দলেই খেলা দেখায়। সার্কাস শিল্পীদের ভবিষ্যত নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতদিন সার্কাস খেলা দেখাইতে পারুম ততদিন দাম আছে। বয়স হইলে কী হবে বলতে পারি না। সরকার যদি উদ্যোগ নিয়ে আমাদের জন্য কিছু করে তাইলে আর ভয় নাই।’ ৬ বছর বয়স থেকে সার্কাসে খেলা দেখান সাতক্ষীরা জেলার আমতলা উপজেলার অখরা খোলা বাজারের আসমা পারভীন (২৫)। তিনি বলেন, ‘সার্কাস না চললে শিল্পীদের খুব কষ্টে থাকতে হয়। সংসার ঠিকমতো চলে না। বর্তমান সময়ে সার্কাস ১ মাস চলে ৩ মাস বন্ধ থাকে। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পাই। বন্ধ থাকলে বেতন পাই না। তখন অন্য পেশায় যেতে হয় পেটের দায়ে। সার্কাস বাংলাদেশের সম্পদ। সরকারের কাছে দাবি জানাই, ১১ মাস যেন সার্কাস প্রদর্শনের অনুমতি দেয়।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com